নিরামিষেই বাজিমাৎ

 

নিরামিষেই বাজিমাৎ  

''সুস্থ দেহে দীর্ঘ জীবন''- এ প্রবাদটি আমরা প্রাচীনকাল থেকেই জেনে আসছি। আর এই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি নাকি লুকিয়ে আছে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাষে। বর্তমান সময়টাও আমাদের কাছে সুখোকর নয়, তাই শরীরকে ফিট রাখতে নিরামিষ খাদ্যের গুণাগুণ কতটা প্রয়োজন। বিভিন্ন চিকিৎসক, বিঞ্জানী এবং আয়ুর্বেদ রিসার্চ সেন্টারের গবেষনার নির্জাস নিয়েই আজ আমরা বিভিউ করবো। 

মাছ, মাংস, ডিম জাতীয় আমিষবর্জিত আহারকে সাধারণত নিরামিষ আহার বলা হয়। নিরামিষ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত ও উদ্ভিদজাত দ্রব্য।

 ১. নিরামিষ কেন খাবো ?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও স্বাস্থ্যের উন্নতিতে নিরামিষ খাদ্য যথেষ্ঠ সাহায্য করে। ভিটামিন, মিনারেলস, ডায়েটারি ফাইবার, বিভিন্নপ্রকার অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, তথা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় শাকসব্জি, রঙিন ফলমূলে থেকে এই উপাদানগুলিই শরীরে পুষ্টির যোগান অটুট রাখে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

2. বিপাকক্রিয়াকে মজবুত রাখতে-

আমিষ খাদ্য যখন আমরা খাই আমাদের শরীরে বিপাকক্রিয়া খুব সহজেই হয় না। কারন আমিষ খাদ্যে থাকে বহুপ্রকার ক্ষতিকর পদার্থ বা টক্সিন, যেটা নির্গত হয়ে আমাদের হজম শক্তিকে দূর্বল করে দেয়, ফলে বিপাকক্রিয়া সময় লাগে। এবং হজমের নানান সমস্যা তৈরি হয়।

৩. ডায়েট্রি ফাইবার - 

ডায়েট্রি ফাইবার হ'ল এক প্রকারের কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের দেহের এনজাইম দ্বারা হজম হতে পারে না। এটি ভোজ্য উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন সিরিয়াল, ফল, শাকসবজি, শুকনো মটর, বাদাম, মসুর এবং শস্যগুলিতে পাওয়া যায়। আমিষ প্রোটিনে ডায়েটারি ফাইবারের মাত্রা খুবই কম থাকায় বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা ঘটায়।

৪. সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করতে - 

শাকসব্জি আমাদের খাদ্য তালিকায় কতটা প্রয়োজন তা গবেষনা না করেই, সহজেই আনুমান করতে পারি। বিভিন্ন প্রকার সব্জিতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার যুক্ত থাকায় পাকস্থলী ও অন্ত্রে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেএই কার্বোহাইড্রেট জাতিয় খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের সহজে খিদে পায় না, কারন ফাইবার আমাদের পেট ভরতি রেখে খিদে কমায়,  এছাড়া আমাদের দেহে অন্ত্রের মাধ্যমে পুষ্টিরস শোষণ করে খুবই ধীর গতিতে, ফলে রক্তে সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা চর্বি জাতিয় খাদ্য এড়িয়ে চলুন -

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা চর্বি নিয়ে আমাদের মনে অনেক আগে থেকেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য এই উপাদানটি মোটেও যে কোনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে পারে না, সেটি প্রায় সবাই জানেন। ম্যাক্রোনিউট্রিশিয়ান(কার্বস, প্রোটিন, ফ্যাট) অনুসারে ২০%-৩০% পর্জন্ত ফ্যাট খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমিষ খাদ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকায় রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। রক্তবাহী ধমনিতে রক্তচলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও বিভিন্ন প্রকার কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ যেমন হার্টের রোগ, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই এই ধরনের রুগিদের ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাদ্যের মেনু নিয়ন্ত্রনে রাখাটাই বাঞ্চোনিয়।

৬. সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে-

কার্বোহাইড্রেট আমাদের ডায়েটগুলির একটি অপরিহার্য অঙ্গ, তবে সমস্ত শর্করা জাতীয় খাবার সমান নয় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) হ'ল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কীভাবে প্রভাবিত করে সে অনুযায়ী খাবারগুলিতে শর্করাগুলির তুলনামূলক র‌্যাঙ্কিং। কম জিআই মান (55 বা তারও কম) সহ কার্বোহাইড্রেটগুলি আরও ধীরে ধীরে হজম হয়, শোষণ করে এবং বিপাক হয় এবং রক্তের গ্লুকোজ কমায়ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন প্রকার শাকসব্জি, দানাশস্য ও ফল বেছে নিতে হবে। এই ধরনের খাদ্যের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে এই খাদ্য আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা চট করে বাড়িয়ে তোলে না। একানেই নিরামিষ খাদ্যের বিশেষত্য।

৭. ক্যালরি বিচার করে খাওয়া উচিত-

ভূগর্ভস্থ কাণ্ডের বর্ধিত অংশ, যার অঙ্কুর থেকে নতুন চারা গজায় সেই মূল ও কন্দ জাতীয় সব্জিতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীর এই ধরনের খাদ্য কম কাওয়া উচিত যেমন আলু, ওল ইত্যাদি মূলত ক্যালরি বিচার করে খাদ্যগ্রহণ করতে হয়।

৮. নিরামিষ খাদ্যে প্রটিনের যোগান-

নিরামিশাসীদেরও খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের প্রয়োজন, সেই প্রটিনের চাহিদা মেটাতে যে সমস্ত নিরামিষ খাদ্যে প্রটিনের যোগান পাওয়া যায় তা খাদ্য মেনুতে সংযুক্ত করতে হবে। ডাল, সয়াবিন বা সয়াবিন জাত দ্রব্য যেমন সয়া মিল্ক, সয়া পনির, আমন্ড, আখরোট, দুধ থেকে তৈরি পনির ইত্যাদি গ্রহণ করা দরকার।

৯. মিনারেলসের অভাব দূর করতে-

এছাড়াও নিরামিষ খাদ্যে মিনারেলসের অভাবে অনেক রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাই সেই ঘাটতি পূরন করতে মিনারেলস আছে এই ধরনের খাদ্য আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তরভুক্ত করতে হবে। যেমন আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে ডুমুর, কাঁচকলা, পালং, কুলেখারা, বেদানা ইত্যাদি খাওয়া য়েতে পারে এবং ক্যালশিয়ামের অভাব দূর করতে সয়াবিন, দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, যেমন দই ঘোল, ছানা পনির ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।

১০. মিনারেলসের

হাইড্রোপনিকস হল চিরাচরিত মাটিতে চাষাবাদ বাদ দিয়ে পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জলের মিশ্রণে চাষাবাদ। হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে উৎপাদিত খাদ্য খেতে অপেক্ষাকৃত সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। স্বল্প জায়গায় বেশি ফসল ফলানো যায়। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে খরচও কম। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন-এর অভাবজনিত সমস্যা দূর করতে শাকসব্জি ফলমূল ইত্যাদি বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া কিছু কিছু ঔষধিগুণসম্পন্ন শাকসব্জি ফলমূল ও ঘরোয়া মশলা আছে, যেমন টমেটো, পুদিনা, তুলসী, থাইম- রান্নায় সুগন্ধ বৃদ্দির জন্য এই পাতা ব্যবহার করা হয়। এগুলি হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। সুতরাং শরীর সুস্থ রাখতে নিরামিষ খাদ্যের উপর জোর দেওয়াই যুক্তি যুক্ত।

Post a Comment

0 Comments

Translate

close