করোনা ভাইরাস |
হার্টের পরিচর্যা করে, হৃদরোগ এড়াতে
কিভাবে সজাগ থাকবেন ?
• চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র নাগালের মধ্যে রাখুন -
যাঁদের হার্ট দূর্বল এই করনা আবহে তাঁদের খুবই সাবধানতা
অবলম্বন করা দরকার তাছাড়া ইতিমধ্যেই যদি
একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়ে থাকে, তাঁদের হৃদযন্ত্রের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে
যায়। এই ধরনের রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এই কারণে এই করনা আবহে কারও
হার্টের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্ট হলেও তাঁকে করোনা রোগী বলে সন্দেহ করার আশঙ্কা
থেকে যায়। সেই কারনে হার্টের রোগীর হাতের কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র রাখাটা
খুবই জরুরি। যদি কোন কারনে হাসপাতালে যেতে হয়, ইমার্জেন্সির চিকিৎসক রোগীর অসুখের ইতিহাস জেনে
সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। চিকিৎসকেরও উচিত শ্বাসকষ্ট মানে শুধু করোনার কথা না
ভেবে, অন্য সমস্যার বিষয়টি মাথায়
রাখা একান্ত জরুরি।
• 'ঔষধ বন্ধ হইবে না ' - করনীয়
ডাক্তারবাবু ঔষধের প্রেসকিপশানে উল্লেখ করেই দিয়েছেন 'ঔষধ বন্ধ হইবে না', মানে যতদিন প্রন আছে ততোদিনই ঔষধ খেয়ে য়েতে হবে।বহু মানুষের ক্ষেত্রেই হার্টের সমস্যা ছাড়াও সুগার, প্রেশারের সমস্যাও থাকে। কিছু হাই প্রেশারের রোগী রামিপ্রিল (এসিই ইনহিবিটর) জাতীয় বা সমতুল ওষুধ খান। এই ধরনের ওষুধ নোভেল করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। কিছু কিছু পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনা অতিমারীর সময়ে এই ধরনের ওষুধ সেবন বন্ধ রাখাই ভালো। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিকল্প যেমন ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার ইত্যাদি ব্যবহার করা প্রয়োজন।বিশেষকরে হাই প্রেশার, সুগার রুগিদের ক্ষেত্রে ঔষধ নিত্যদিনের সঙ্গি, ঔষধ ছাড়া একটি দিনও চলে না, সেইহিসাবে করোনা অতিমারীর সময়ে এই সব জীবনদায়ী ঔষধ সবসময় পাওয়া যায় না। সেইকারনে বিকল্প ঔষধ বাছার আগে টেলিমেডিসিনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক এইরকম ওষুধগুলিও কোভিড সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। কিছু বেদনানাশক ওষুধেও আইবুপ্রোফেন থাকে। সেক্ষেত্রেও ব্যবহারে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। তবে স্ট্যাটিন জাতীয় ঔষধ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার ঔষধ, রক্ত তরল রাখার ঔষধ, হার্ট ফেলিওরের ঔষধ যেমন খাচ্ছিলেন, খেয়ে যাবেন। তবে ইসিজি করে দেখে নেওয়া উচিত কিউ-টি-ইন্টারভ্যাল বেশি বা ব্র্যাডিকার্ডিয়া, ছন্দপতন-এর সমস্যা আছে কিনা, তবেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো ঔষধের প্রয়োগ করা যেতে পারে।
• হার্টের রোগীর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুস এবং কিডনির অসুখের মতো সমস্যা থাকলে তাঁকে দ্বিগুণ নজরদারিতে রাখা উচিত।
• বিশেষ সাবধানতা নেওয়া উচিত বয়স্ক মানুষ জনদের জন্য বিশেষত পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, তাদের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সরাসরি সংস্পর্শে না আসাই ভালো, হার্টের অসুখ থাকলে এই সাবধানতা বিশেষ কেরে মানা দরকার।
• হার্টের রোগীরা সরবিট্রেট রেখে দিতে পারেন বাড়িতে। বুকে প্রবল ব্যথা অনুভব করলে ৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট জিভের তলায় রেখে দিন।
• এই করেনা আবহে অনেকেরই হার্ট অপারেশনের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরিবেশে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে ঔষধ খেয়ে সুস্থ থেকে অপারেশন ক’দিন পিছিয়ে দেওয়াই ভালো বলে মনে হয়। তবে সমস্যা জটিল হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো কাজ করতেই হবে।
হাসপাতালে রুগিকে কখন নিয়ে যাওয়া দরকার—
• যখন বোঝা যাবে রুগি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে, মারাত্মক ক্লান্তিতে দেহ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে এবং কী করছেন, কোথায় আছেন বুঝতে পারছে না, বুকে ব্যথা হলে, হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে গেলে, বুকে প্রবল চাপ অনুভব করলে বুঝতে হবে রোগীর হার্ট ব্লক বা অ্যাটাকের সমস্যা হয়েছে। সেক্ষেত্রে রোগীকে যত গূত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
• অনেক সময়ই দেখা যায় সামান্য হাঁটাচলা করলেই বুকে ব্যথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে সমস্যাটা আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছে না, তাঁরা চিকিৎসকের সঙ্গে সত্তর যোগাযোগ করুন। কারণ করোনার ভয়ে আপনি যদি আপনার সমস্যা এড়িয়ে য়ান, পরে তীব্র বুকে ব্যথা হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বহু সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়, এবং চিকিৎসা করতে যদি কোন রখম গাফিলতি বা দেরি হয় সেটা রোগির ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রোগিকে সুস্থ রাখতে কি কি করনীয়—
• নিয়মিত ফোন বা টেলিমেডিসিনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলুন।
• ঘরের মধ্যে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে পারেন। ভিটামিন সি থেকেই আপনার শরীরে ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়বে যেটা রোগ পরিরোধ করতে সাহায্য করবে।
• ''আকাশ
আমায় শিক্ষা দিলো উদার হতে ভাইরে....'' প্রকৃতির কাছাকাছি আসুন,
জানালা খুলে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে দেখুন, মনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। পরিবারের
শিশু সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, আড্ডা দিন।যদি সম্ভব হয় পুরানো দিনের গান
শুনুন-রবীন্দ্রসংগীত, মান্ন দে, হেমন্ত আপনার যা ভালো লাগে, একদম নষ্টালজিক মেজাজে
দিন কাটান।মন-মেজাজ ভালো রাখুন। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন,
সবসময় ইতিবাচক ভাবুন, এবং অপরকে ইতিবাচক করে তুলুন।
0 Comments