রামকৃষ্ণ মিশন সমন্ধে বিদেশীদের আগ্রহ !

রামকৃষ্ণ মিশন  সমন্ধে বিদেশীদের আগ্রহ !


১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে রোলাঁ নবপ্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন সম্বন্ধে জানতে পারেন। শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন সম্বন্ধে আরো জানার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েন। সন্ধান পেলেন ‘The Face of Silence’ গ্রন্থটির। গ্রন্থটি রোলাঁকে মুগ্ধ করে এবং তাঁর শিল্পিসুলভ চিন্তাধারার ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে, যা তাঁর প্রতিবেদনশীল মনে এক সুগভীর, চিরস্থায়ী আকর্ষণের রেখাপাত করে। রোলাঁ অতি আগ্রহ সহকারে লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি শ্রী মুখার্জিকে তাঁর বাসগৃহে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর আন্তরিক আগ্রহে শ্রী মুখার্জি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর আমেরিকা থেকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এসম্বন্ধে রোলাঁ তাঁর ডায়েরিতে এক বিশদ দীর্ঘ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। এই সাক্ষাতের পর শ্রীরামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে রোলাঁর কৌতূহল দশগুণ বৃদ্ধি পায়।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে ম্যাকলাউডের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকারটিও তিনি লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। তার মধ্যেই পাওয়া যায় এই মন্তব্যটিঃশ্রী মুখার্জির আগমনের অনেকগুলি মাসপ্রায় এক বছর পর, আমার ভগ্নি এবং আমি শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি এক তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতে লাগলাম। শ্রী মুখার্জি ভারতবর্ষের রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন।তিনি আরো লিখেছেন যে, “ম্যাকলাউডের মধ্যস্থতায়তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধেএকটি গ্রন্থাগারের সমসংখ্যক গ্রন্থাবলিলাভ করেন। কিন্তু রোলাঁর ইংরেজি ভাষা সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান ছিল না। তাঁর ভগ্নি Madeleine ছিলেন এক অনুগত সহকারিণী এবং তিনি ফরাসি ভাষায় উচ্চকণ্ঠে ঐসকল ইংরেজি গ্রন্থের অনুবাদ রোলাঁকে শোনাতেন। এভাবেই তিনি সর্বপ্রথম রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সম্বন্ধে তাঁর চিন্তাধারাকে পরিপুষ্ট করে তোলেন। ধর্মীয়-ঐতিহাসিক Mercea Eliade আর একটি উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ করেন, যেটি রোলাঁ শুধুমাত্র জয়ই করেননি, পরন্তু সেটির ঊর্ধ্বে নিজের উত্তরণ ঘটানঃভারতবর্ষের ইতিহাস, তার ভাষা ইংরেজি সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানের অভাব সত্ত্বেও তিনি গান্ধি, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সম্বন্ধে চার খণ্ড গ্রন্থ রচনা করেন। আধুনিক সংস্কৃতির ইতিহাসে ঘটনাটি অভূতপূর্ব বলে আমি বিশ্বাস করি।
মিস ম্যাকলাউড ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ১৬ মে তারিখে আরো দু-বার সুইজারল্যান্ডে রোলাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর আগমন রোলাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে কিছু লেখার জন্য অনুপ্রাণিত এবং উদ্বুদ্ধ করে। সে-কাজে তাঁকে বিশেষ সাহায্য করেন স্বামী অশোকানন্দ। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন রোলাঁ তাঁকে লেখেনঃপ্রায় এক বছর পূর্বে ধনগোপাল মুখার্জি রচিত ‘The Face of Silence’ গ্রন্থের কয়েকটি পৃষ্ঠা...মহাত্মা শ্রীরামকৃষ্ণকে সার্থকভাবে আমার কাছে উদ্ভাসিত করে তুলেছে এবং এই আলোকচ্ছটা তাঁর জীবন ভাবধারা সম্বন্ধে আরো জানার জন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ...মিস ম্যাকলাউডের সঙ্গে একত্রে এই কটি দিন অতিবাহিত করার সময়, স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে বিশদভাবে আলোচনা হয়...যাঁকে আমি আধ্যাত্মিক শক্তির বহ্নিস্বরূপ এবং শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রেমের কুসুমস্বরূপ গণ্য করি। উভয়েই ঈশ্বর এবং সেই সনাতন সত্যের প্রভা বিতরণ করছেন। মহত্তর প্রতিভাশালী হলেন স্বামী বিবেকানন্দ, কিন্তু সব প্রতিভার ঊর্ধ্বে ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।

স্বামী তথাগতানন্দেরপ্রাচ্যের আলোথেকে



Post a Comment

0 Comments

Translate

close