জুম অ্যাপ নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম নয়
সুরক্ষার উদ্দেশ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট নির্দেশিকা
রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম
ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
..............................
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে
রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী এই তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই কবিতা শুনলে আমরা কেমন নষ্টালজিক হয়ো পড়ি, সেই সময়ের রানারকে চোখের সামলে দেখতে পাই। আজ সেসবই ইতিহাস, স্মৃতির পাতা থেকে সেসবই ইতিহাস আমরা মুছে ফেলেছি। আজ আমরা প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের কল্যানে মঙ্গলগ্রহে বাসকরার চিন্তা করছি। তাই কোন সংবাদ বা খবরের আসায় নিভৃত রাত্রি জাগার দিন চলে গেছে। কিন্তু সেই ভয়, অতঙ্ক আজও রয়ে গেছে। আমরা এখন সেই খবর বা কোন সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে পেয়ে থাকি হোয়াট অ্যাপ, ফেসবুক এবং ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপের মাধ্যমে। বর্তমান পরিস্থতি আরে উদ্বেগ জনোক, আমরা সবাই গৃহবন্দি, স্কুল, কলেজ, অফিস আদালত প্রায় সবই বন্ধ। কিন্তু আমাদের সব কাজ চালিয়ে যেতে হবে, তাই অনলাইন ব্যবস্থা বা ভিডিও কনপারেন্সিং-এর মতো অ্যাপের দারস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের কাছে বিপল্প কোন পথ নেই। আর সেই খানেই বিপত্তি, আমরা যে ভিডিও কনপারেন্সিং অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করছি সেটা নিরাপদ তো? আমাদের কোন তথ্য বা নথি অযাচিত ভাবে কেউ হস্থক্ষেপ করছে নাতো?
মোবাইলে হ্যাকারে সিঁধ কাটছে না তো?
অধিকাংশ নেটিজেনই ভিডিও কনফারেন্সের জন্য ব্যবহার করছেন ‘জুম অ্যাপ’। কিন্তু, আদৌ কি সেই অ্যাপ নিরাপদ? জুমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর মোবাইলে হ্যাকার সিঁধ কাটছে না তো? এরকমই হাজারও প্রশ্ন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এবিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য মিলল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি অ্যাডভাইসরি জারি করে বলেছে, জুম অ্যাপ নিরাপদ নয়। এমনকী সরকারি কর্মীদের বৈঠক বা অন্য কোনও কাজের ক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যাপের ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা জুম অ্যাপ ব্যবহার করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সতর্কতা মেনে তা ব্যবহার করুন।
জুম
অ্যাপের বিপুল চাহিদা কেন ?
এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সর্বত্র লকডাউন, আর সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জুম অ্যাপ। যেহেতু লকডাউন শুরু হতেই সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করেছে। মার্কিন এই টেলি কনফারেন্সিং অ্যাপ ভারত সহ গোটা বিশ্বেই গত একমাসে ব্যাপক হারে ডাউনলোড হয়েছে। বিভিন্ন টেক সংস্থার তথ্য বলছে, মার্চের একটি দিনে শুধুমাত্র আমেরিকায় ৩.৪৩ লক্ষ বার ডাউনলোড হয় জুম অ্যাপ। কিন্তু, এখন প্রশ্ন হলো এতোগুলি ভিডিও কলিং অ্যাপ থাকতে, জুম অ্যাপের এতো বাড়বাড়ন্ত কেন? টেক গুরুদের মতে, জুম অ্যাপে বিনামূল্যে একসঙ্গে সর্বাধিক ১০০ জন একটি ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেন। সর্বাধিক ৪০ মিনিট ধরে চলতে পারে কনফারেন্স। এছাড়া টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করলে সুযোগ সুবিধা আরও বেশি। ফলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করা জনতা ও পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয় অ্যাপটি।
উত্থান রহস্য-
ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে সদরজুমদফতরের একটি আমেরিকান যোগাযোগ প্রযুক্তি সংস্থা। এটি ক্লাউড-ভিত্তিক পিয়ার-টু-পিয়ার সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভিডিওটেলফোনি এবং অনলাইন চ্যাট পরিষেবা সরবরাহ করে এবং টেলিকনফরেন্সিং, টেলিযোগাযোগ, দূরত্ব শিক্ষা এবং সামাজিক সম্পর্কের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।প্রাক্তন সিসকো ওয়েবেক্স প্রকৌশলী এবং নির্বাহী এরিক ইউয়ান ২০১১ সালে জুম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ২০১৩ সালে এর সফটওয়্যার চালু করেছিলেন। তারপর থেকে ফিরে তাকাতে হয়নি, জুমের ক্রমবর্দ্ধমান রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সফ্টওয়্যারটির ব্যবহারের সহজলভ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতার ফলস্বরূপ, 2017 সালে $ 1 বিলিয়ন ডলার মূল্যায়নের ফলে এটি একটি "ইউনিকর্ন" সংস্থা তৈরি করে। সংস্থাটি প্রথম 2019 সালে লাভজনক হয়ে ওঠে, এবং সে বছর একটি প্রাথমিক পাবলিক অফার সম্পন্ন করে, সংস্থাটি 30 এপ্রিল, 2020-এ নাসডাক -100 স্টক সূচকে যোগ দেয়।
পতনের কারন-
মার্চ মাসে প্রথম ধাক্কা আসে নিউ ইয়র্ক থেকে। প্রশ্ন ওঠে অ্যাপে তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে। নিউ ইয়র্কের শিক্ষা দপ্তর শহরের স্কুলগুলিতে জুম অ্যাপের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ফেলে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকেও তথ্য চুরির অভিযোগ আসছিল। জুমের কর্মীদের একটি অংশ চীন ভিত্তিক, যা নজরদারি এবং সেন্সরশিপ উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ক সংস্থা (ক্রেট)– Computer Emergency Response Team of India (CERT-in) কয়েকদিন আগে জুম অ্যাপের তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছিল। এবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অ্যাপটিকে সরাসরি নিরাপদ নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হল।
জুম
ব্যবহারকারী দের সুরক্ষার
উদ্দেশ্যে কয়েকটি
নির্দিষ্ট নির্দেশিকা -
২০২০
সালের গোড়ার দিকে, COVID-19
মহামারীর প্রতিক্রিয়া হিসাবে গৃহীত পৃথক পৃথক ব্যবস্থার প্রবর্তনের পরে জুমের
সফ্টওয়্যার ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, যারা এখনও জুম ব্যবহার করতে চান
তাদেরকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলেছেন -
* প্রতিটি সভার জন্য একটি নতুন ব্যবহারকারী
আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করুন
* অ্যাপটিতে একটি ওয়েটিং রুম তৈরি করুন যাতে
কোনও ব্যবহারকারী কেবল তখনই হোস্ট তাকে অনুমতি দিলে সভায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
* হোস্টিংয়ের আগে যোগদানের বৈশিষ্ট্যটি
অক্ষম করুন।
* অনুমতি দেওয়া নিরাপদ (Secure) করুন।
* কেবল হোস্টের দ্বারা স্ক্রিন ভাগ করে
নেওয়ার অনুমতি দেওয়া দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
* সরানো অংশগ্রহণকারীদের পুনরায় যোগদানের অনুমতি
সঠিক ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
* ফাইল স্থানান্তরকে সীমাবদ্ধ বা অক্ষম করার
পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
* যখন সমস্ত অংশগ্রহণকারী যোগদান করবেন, তখন সভাটি লক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
* রেকর্ডিং বৈশিষ্ট্য সীমাবদ্ধ করুন।
* বৈঠক শেষ করতে (শুধু প্রশাসক হলে ছেড়ে
যাবেন না)
0 Comments