কর্মই ঈশ্বর লাভের একমাত্র পথ

         

                কর্মই  ঈশ্বর লাভের একমাত্র পথ 


সত্য যেন সত্যেরই মতো ভাস্বর থাকে, এটিই ছিল এই আচার্যের ইচ্ছা কোন রকম নতি বা আপসের বালাই নেই; কোন পুরোহিত, কোন ক্ষমতাপন্ন লোক, কোন রাজার তোষামোদ করবারও আবশ্যক নেই কোন কুসংস্কারমূলক আচারের কাছেতা যত প্রাচীনই হোক না কেন, কারও মাথা নোয়াবার প্রয়োজন নেই; সুদূর অতীতকাল থেকে চলে আসছে লেই কোন অনুষ্ঠান বা পুঁথিকে মেনে নিলে চলবে না সমস্ত শাস্ত্রগ্রন্থ এবং ধর্মীয় তন্ত্র-মন্ত্র তিনি অস্বীকার করেছেন এমন কি যে সংস্কৃত ভাষায় বরাবর ভারতবর্ষে ধর্মশিক্ষা চলে আসছিল, তাও তিনি বর্জন করেছিলেন, যাতে তাঁর অনুগামীরা ভাষায় সঙ্গে সংযুক্ত সংস্কারগুলি কোনরূপে গ্রহণ করতে না পারে
যে-তত্ত্বটি এতক্ষণ আমরা আলোচনা করছিলাম, তাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা যায়হিন্দুর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমরা বলি, বুদ্ধের এই আত্মত্যাগের শিক্ষাকে আমাদের দৃষ্টিতে বিচার করলে আরও ভাল রে বুঝতে পারা যাবে উপনিষদে আত্মা ব্রহ্ম সম্বন্ধে গভীর তত্ত্বের কথা আছে আত্মা আর পরব্রহ্ম অভিন্ন যা-কিছু সবই আত্মাএকমাত্র আত্মাই সৎ-বস্তু মায়াতে আমরা আত্মাকে বহু দেখি আত্মা কিন্তু এক, বহু নয় সেই এক আত্মাই নানারূপে প্রতিভাত হয় মানুষ মানুষের ভাই, কারণ সব মানুষই এক বেদ বলেন: মানুষ শুধু আমার ভাই নয়, সে আমার স্বরূপ বিশ্বের কোন অংশকে আঘাত রে আমি নিজেকেই আঘাত করি আমিই বিশ্বজগৎ আমি যে ভাবি, আমি অমুকইহাই মায়া প্রকৃত স্বরূপের দিকে যতই অগ্রসর হবে, এই মায়াও তত দূরে যাবে বিভিন্নত্ব ভেদবুদ্ধি যতই লোপ পাবে, ততই বোধ করবে যে সবই এক পরমাত্মা ঈশ্বর আছেন, কিন্তু দূর আকাশে অবস্থান করছেনএমন একজন কেউ নন তিনি তিনি শুদ্ধ আত্মা কোথায় তাঁর অধিষ্ঠান? তোমার অন্তরের অস্তস্তলেই তিনি রয়েছেন; তিনিই হচ্ছেন অন্তরাত্মা তোমার নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন বা পৃথক্রে কিভাবে তাঁকে ধারণা করবে? যখন তুমি তাঁকে তোমা থেকে স্বতন্ত্র লে ভাবছ, তখন তাঁকে জানতে পার না; ‘তুমিই তিনি’—এটিই ভারতীয় ঋষিদের বাণী তুমি অমুককে দেখছএবং জগতের সবই তোমা থেকে পৃথক্‌, -রকম ভাব নিছক স্বার্থপরতা তুমি মনে কর, তুমি আর আমি ভিন্ন আমার কথা তুমি একটুও ভাবো না তুমি ঘরে গিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লে আমি মরে গেলেও তোমার ভোজন পান আনন্দ ঠিকই থাকে কিন্তু সংসারের বাকী লোক যখন কষ্ট পায়, তখন তুমি সুখ ভোগ করতে পার না আমরা সকলেই এক বৈষম্যের ভ্রমই যত দুঃখের মূল আত্মা ছাড়া আর কিছু নেইকিছুই নেই!
বুদ্ধের শিক্ষা ঈশ্বর লে কিছু নেই, মানুষই সব ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রচলিত যাবতীয় মনোভাবকে তিনি অস্বীকার করেছিলেন তিনি দেখেছিলেন, এই মনোভাব মানুষকে দুর্বল এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে! সব-কিছুর জন্য যদি ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করবে, তা লে কে আর কর্ম করতে বেরোচ্ছে, বলো? যারা কর্ম করে, ঈশ্বর তাদেরই কাছে আসেন



স্বামী বিবেকানন্দেরমহাপুরুষ প্রসঙ্গথেকে


Post a Comment

0 Comments

Translate

close